Abstract
ভাওয়াইয়া গান ভাবের গান। উত্তরপূর্ব ভারতের একটি অন্যতম বিখ্যাত গানের ধারা। যদিও গান এখন আর শুধুমাত্র কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আসাম বা এতদঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই। বহু প্রথিতযশা শিল্পীর সুললিত কন্ঠে এই গান এখন বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। এই চিরাচরিত সঙ্গীত প্রায় ৪ কোটি দেশীয় মানুষ প্রধানতঃ রাজবংশী এবং প্রাচীন জনপথ কামরূপে বংশানুক্রমে বসবাসকারী কামতাপুরী(নশ্যশেখ, নাথ, খেন, যুগী, দেশীয় ব্রাহ্মণ, দেবনাথ, শীল) মানুষ যাঁরা কিনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর অঞ্চলে; আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া, বোঙ্গাইগাও, কোকরাঝার, চিরাং জেলা; বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ; নেপালের সমতলের ঝাপা ও মোরং ইত্যাদি সহ বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘকাল ধরে বংশানুক্রমিক গঠন, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও এথনিক বৈচিত্র্য নিয়ে বসবাস করে আসছেন তাঁদের ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কর্মপরিকল্পনা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথা, পূজাপার্বন, খাদ্য, পোশাক, প্রেম, বিরহ, দ্রোহ ইত্যাদির অভিব্যক্তি স্বরূপ। ভাওয়াইয়া গান মূলতঃ গ্রামীণ গান, মাটির গান। নিজস্ব ভাষায় মানুষের আঞ্চলিক উচ্চারণ রীতির উপর নির্ভর করেই দোতারা, সারিন্দা, ঘুলটুং, বাঁশি, খোল অথবা ঢোল, জুরি ইত্যাদির সাথে এই গান সংগঠিত হয়। 'দোতরা' নামক যন্ত্রটি এই গানের অপরিহার্য্য অঙ্গ, পরিপূরক। এই গান শ্রুতি ও স্মৃতিনির্ভর হয়ে বহু প্রাচীন কাল থেকেই কুলু কুলু নদীর মতো প্রবাহিত। প্রাথমিক পর্যায়ে এইসব গানের রচয়িতা ও গায়ক ছিল বাথানে গরু, মহিষচারণরত মইশাল, রাখাল, গাড়ি চালক গাড়িয়াল, বানিজ্যে গমনরত সাধু অথবা মাহুতবন্ধুরা। শোনা যায়, এই গান রাজবংশী সমাজজীবনের বহু সাংস্কৃতিক আবহে(কুশান, দোতরাডাঙা, বিষহরা ইত্যাদি ধারার গানে) খোসা গান হিসেবেও গাওয়া হতো একটা সময়। পরবর্তী সময়ে সেই প্রকৃতির মাঝখানে সৃষ্ট গানকে সামান্য ঘষামাজা করে রেকর্ড ও মঞ্চস্থ করার শুভ উদ্যোগ ও সাহস গ্রহণ করেন বেশ কিছু প্রথিতযশা গায়ক ও ভাওয়াইয়ার শুভ চিন্তক। তাঁদের হাত ধরেই পরবর্তীকালে সংকীর্ণ গন্ডি পার করে ভাওয়াইয়া গান বৃহত্তর শ্রোতার কাছে পৌঁছোয় এবং বলাবাহুল্য বিশ্বব্যাপী এই গান আদরণীয় হয়ে ওঠে। এরকমই কয়েকজন বরেণ্য ভাওয়াইয়া শিল্পীর জীবন শুধুমাত্র শ্রদ্ধা নিবেদনের নিরিখে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। তারা যথাক্রমে আব্বাসউদ্দীন আহমেদ, সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনীয়া, নায়েব আলী টেপু, কেদার চক্রবর্তী, প্রতিমা বড়ুয়া পান্ডে, গঙ্গাচরণ বিশ্বাস, প্যারীমোহন দাস, ধনেশ্বর রায়। যদিও এই আলোচনা অপ্রতুলতার মধুর দোষে দুষ্ট।